দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে শিগগিরই শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সকল স্তরে এই অভিযান চালানো হবে বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, পদ-পদবি যাই হোক না কেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না।
দলীয় শীর্ষ নেতৃত্ব বিব্রত হচ্ছেন চাঁদাবাজি, দখল, এমনকি হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগে যুক্ত কিছু নেতা-কর্মীর কারণে। এসব নেতার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা ছাড়াও অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, জেলা ও মহানগর থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত ‘চেইন অব কমান্ড’ ঠিক রাখতে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। অভিযোগ পেলে কেন্দ্রীয় নেতারাও এর আওতায় আসবেন।
এদিকে জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল ‘মবতন্ত্র’ রুখে দিতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা মবতন্ত্রকে ‘ডেমোক্রেসি’র বড় শত্রু আখ্যা দিয়ে দেশের সর্বস্তরে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে।
দলটির হাইকমান্ডের নির্দেশে ইউনিয়ন থেকে মহানগর পর্যায়ের সকল কমিটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিশেষ নজরে রয়েছে এমন সব নেতা-কর্মী, যাদের বিরুদ্ধে জনমনে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের ওপর যাদের আস্থা নেই, তাদের দল থেকে বাদ দেওয়া হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, দলের ইমেজ রক্ষায় যেকোনো অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, মবতন্ত্রে নয়—এ বার্তা ছড়িয়ে দিতে সারাদেশে কর্মসূচি নেওয়া হবে।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় ৫ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারপরও কিছু এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে দলটি। বিশেষ করে, ঢাকা মহানগরীর কিছু থানা কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজি ও দখলের অভিযোগ উঠেছে।
পুরান ঢাকার ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ড নিয়েও তিনটি অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না অভিযোগ করেন, অভিযুক্তদের সিসিটিভিতে শনাক্ত করা সত্ত্বেও তাদের মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের সুনাম রক্ষায় কোনো অভিযোগ এলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে গণতন্ত্রহীন পরিবেশ ও অনির্বাচিত সরকারের কারণে সবসময় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
দলের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন, বর্তমানে বিএনপিতে ‘হাইব্রিড’ এবং ‘নব্য নেতা’দের আধিপত্য বাড়ছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে সুবিধা নেওয়া এসব নেতাই এখন নানা অপকর্মে লিপ্ত। তাদের কারণে ত্যাগী কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
বিএনপির মতে, ‘মবতন্ত্র’ রোধে এবার দল কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্টের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এসব মোকাবিলায় দল ও অঙ্গসংগঠনগুলো ব্যাপক কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে।